কম্বাশন অব ফুয়েল বা জ্বালানির দহন: সংজ্ঞা, ধরন, ব্যবহার ও প্রশ্নোত্তর

🔥 কম্বাশন অব ফুয়েল (Combustion of Fuel) — সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা

কম্বাশন অব ফুয়েল বলতে বোঝায় জ্বালানির অক্সিজেনের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় জড়িয়ে তাপ ও আলো উৎপন্ন করার প্রক্রিয়া। এটি একটি এক্সোথার্মিক বিক্রিয়া, অর্থাৎ এই বিক্রিয়ায় শক্তি নির্গত হয়।

🔹 জ্বালানি (Fuel) কী?

জ্বালানি হলো এমন পদার্থ যা দহনের মাধ্যমে তাপশক্তি উৎপন্ন করে। যেমন: কাঠ, কয়লা, পেট্রোল, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি।

Combustion of Fuel

🔹 দহনের জন্য প্রয়োজনীয় তিনটি উপাদান (Fire Triangle)

  • ১. জ্বালানি পদার্থ
  • ২. অক্সিজেন
  • ৩. প্রজ্বলন তাপমাত্রা

🔹 কম্বাশনের প্রকারভেদ

১. সম্পূর্ণ দহন (Complete Combustion): পর্যাপ্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে জ্বালানি সম্পূর্ণ দহন হয়। ফলে উৎপন্ন হয় কার্বন ডাই অক্সাইড, পানি ও প্রচুর তাপ।

২. আপূর্ণ দহন (Incomplete Combustion): অক্সিজেনের অভাবে আংশিক দহন ঘটে, ফলে উৎপন্ন হয় কার্বন মনোঅক্সাইড (CO), ধোঁয়া ও তুলনামূলকভাবে কম তাপ।

৩. স্বতঃস্ফূর্ত দহন (Spontaneous Combustion): বাহ্যিক আগুন ছাড়াই কোনো পদার্থ নিজে থেকেই দহন শুরু করে। যেমন: তৈলাক্ত কাপড় বা পঁচা পাতা।

🔹 রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া (উদাহরণ)

CH₄ + 2O₂ → CO₂ + 2H₂O + তাপ

এখানে মিথেন (CH₄) অক্সিজেনের সঙ্গে দহন করে কার্বন ডাই অক্সাইড, পানি ও তাপ তৈরি করে।

🔹 কম্বাশনের ব্যবহার

  • রান্নার কাজে (চুলায় গ্যাস)
  • গাড়ির ইঞ্জিনে শক্তি উৎপাদনে
  • বিদ্যুৎ উৎপাদনে (থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট)
  • শিল্প-কারখানায় বয়লার চালনায়

🔹 কম্বাশনের সুবিধা ও অসুবিধা

✅ সুবিধা:

  • তাপ ও শক্তি উৎপন্ন হয়
  • পরিবহন, রান্না ও শিল্পে ব্যবহারযোগ্য
  • সহজলভ্য ও কার্যকর

⚠️ অসুবিধা:

  • দূষণ সৃষ্টি করে (CO, CO₂, ধোঁয়া)
  • গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়ায়
  • অবিচার্যভাবে ফসিল ফুয়েল শেষ হয়ে যাচ্ছে

📚 ভাইভা প্রশ্ন ও উত্তর (বিশেষভাবে এক্সাম উপযোগী)

প্রশ্ন ১: কম্বাশন কী?
উত্তর: জ্বালানির অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়ার মাধ্যমে তাপ ও আলো উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াকে কম্বাশন বলে।

প্রশ্ন ২: সম্পূর্ণ ও আপূর্ণ দহনের পার্থক্য কী?
উত্তর: সম্পূর্ণ দহনে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকে এবং CO₂ উৎপন্ন হয়। আপূর্ণ দহনে অক্সিজেন কম থাকে এবং CO উৎপন্ন হয়।

প্রশ্ন ৩: কোন কোন জ্বালানিকে আমরা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করি?
উত্তর: প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোল, ডিজেল, কাঠ, কয়লা ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৪: দহনের জন্য কোন তিনটি উপাদান প্রয়োজন?
উত্তর: জ্বালানি, অক্সিজেন ও প্রজ্বলন তাপমাত্রা।

প্রশ্ন ৫: কম্বাশন কীভাবে পরিবেশে প্রভাব ফেলে?
উত্তর: CO₂ ও CO গ্যাস নিঃসরণ করে যা বায়ুদূষণ ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং সৃষ্টি করে।

প্রশ্ন ৬: দহন একটি এক্সোথার্মিক বিক্রিয়া কেন?
উত্তর: কারণ এতে তাপ ও শক্তি নির্গত হয়।

প্রশ্ন ৭: আপূর্ণ দহনের প্রধান সমস্যা কী?
উত্তর: এতে বিষাক্ত কার্বন মনোঅক্সাইড উৎপন্ন হয় যা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

প্রশ্ন ৮: স্বতঃস্ফূর্ত দহন কী?
উত্তর: বাহ্যিক আগুন ছাড়াই কোনো পদার্থ নিজে থেকেই দহন শুরু করলে তাকে স্বতঃস্ফূর্ত দহন বলে।

প্রশ্ন ৯: ফায়ার ট্রায়াঙ্গেল কী?
উত্তর: দহনের জন্য প্রয়োজনীয় তিনটি উপাদান: জ্বালানি, অক্সিজেন ও তাপ — একত্রে ফায়ার ট্রায়াঙ্গেল গঠন করে।

প্রশ্ন ১০: গৃহস্থালিতে কোন দহন প্রক্রিয়া ঘটে?
উত্তর: গ্যাসের চুলায় সম্পূর্ণ দহন ঘটে যেখানে মিথেন অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে।

🔎 অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

  • কম্বাশন একটি দ্রুত বিক্রিয়া যা উচ্চ তাপমাত্রায় ঘটে
  • অতিরিক্ত কার্বন মনোঅক্সাইড মানব শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে বাধা সৃষ্টি করে
  • পরিবেশবান্ধব জ্বালানির দিকে ঝুঁকতে হবে যেমন: বায়োগ্যাস, সৌর শক্তি

📌 উপসংহার

জ্বালানির দহন আমাদের আধুনিক জীবনে শক্তির অন্যতম উৎস। তবে এটি ব্যবহারে আমাদের সচেতনতা জরুরি, যাতে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য উভয়ই সুরক্ষিত থাকে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url