পদার্থবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর – বিসিএস, শিক্ষক নিয়োগ ও ইন্টারভিউর জন্য ১০০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন

 আপনি কি পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষায় ভালো করতে চান? বিসিএস, শিক্ষক নিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কিংবা ইন্টারভিউ—সব ক্ষেত্রেই পদার্থবিজ্ঞান থেকে প্রশ্ন আসবেই। অনেকেই শুধু বই মুখস্থ করে, কিন্তু বারবার পরীক্ষায় ভিন্নধরনের প্রশ্ন দেখে হতবাক হয়ে যায়! এই পোস্টে আমরা তুলে ধরেছি ১০০টি বাস্তবভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর—যা পরীক্ষায় প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি প্রশ্ন এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে আপনি বুঝেও মনে রাখতে পারেন। একবার পড়লেই কাজে লাগবে বহুবার! তাহলে আর দেরি কেন? শুরু করুন এখনই!

physics-questions-answers

🔹 পর্ব ১: মৌলিক ধারণা ও একক

1. পদার্থবিজ্ঞান কাকে বলে?

➤ প্রকৃতির নিয়ম ও শক্তি নিয়ে গবেষণাই পদার্থবিজ্ঞান। পদার্থবিজ্ঞান হলো বিজ্ঞানের একটি শাখা যা পদার্থ, শক্তি এবং তাদের পারস্পরিক ক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে।


2. SI একক কাকে বলে?

➤ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একক ব্যবস্থাকে SI একক বলে। SI একক (International System of Units) হল পরিমাপের জন্য একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি।


3. দৈর্ঘ্যের SI একক কী?

➤ মিটার (Meter)


4. ভরের SI একক কী?

➤ কিলোগ্রাম (Kilogram)


5. সময়ের SI একক কী?

➤ সেকেন্ড (Second)


6. তাপমাত্রার SI একক কী?

➤ কেলভিন (Kelvin)


7. বেগের একক কী?

➤ মিটার/সেকেন্ড (m/s)


8. ত্বরণের একক কী?

➤ মিটার/সেকেন্ড² (m/s²)


9. বল কাকে বলে?

➤ বস্তুকে অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্যকারী প্রভাবই বল। বল হল একটি বাহ্যিক প্রভাব যা কোনো বস্তুর উপর ক্রিয়া করে তার গতির পরিবর্তন ঘটায় অথবা পরিবর্তন করার চেষ্টা করে। সহজ ভাষায়, যা কোনো স্থির বস্তুকে গতিশীল করে বা করতে চায় অথবা কোনো গতিশীল বস্তুর গতি পরিবর্তন করে বা করতে চায়, তাকে বল বলে।


10. বল এর একক কী?

➤ নিউটন (N)


🔹 পর্ব ২: গতি ও বল

11. নিউটনের প্রথম সূত্র কী?

➤ নিউটনের প্রথম সূত্রটি "জড়তার সূত্র" নামেও পরিচিত। এই সূত্র অনুসারে, "বাহ্যিক বল দ্বারা প্রভাবিত না হলে, স্থির বস্তু স্থিরই থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সুষম গতিতে সরলরেখায় চলতে থাকবে।" সহজভাবে বললে, একটি বস্তু যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থাতেই থাকতে চায়। যদি স্থির থাকে, তবে স্থিরই থাকতে চাইবে এবং যদি গতিশীল থাকে, তবে সমগতিতে সরলপথে চলতে থাকবে। একে বাধা না দিলে এর গতির পরিবর্তন হবে না।


12. নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রের সূত্র কী?

➤ নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রানুসারে, কোনো বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার (সময় সাপেক্ষে) প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে, ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে ঘটে। একে গাণিতিকভাবে F = ma (এখানে F = বল, m = ভর এবং a = ত্বরণ) লেখা যায়।


13. নিউটনের তৃতীয় সূত্র কী?

➤ নিউটনের তৃতীয় সূত্রটি হল: প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে। অর্থাৎ, যখন একটি বস্তু অন্য একটি বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করে, তখন দ্বিতীয় বস্তুটিও প্রথম বস্তুর উপর সমান এবং বিপরীতমুখী একটি বল প্রয়োগ করে।


14. ত্বরণ কাকে বলে?

➤ ত্বরণ (Acceleration) হলো সময়ের সাথে কোনো বস্তুর বেগ পরিবর্তনের হার। অন্যভাবে বললে, বেগ বৃদ্ধির হারকে ত্বরণ বলে। এটি একটি ভেক্টর রাশি, যার মান এবং দিক উভয়ই রয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি সেকেন্ডে বস্তুর বেগ যতখানি বাড়ে বা কমে, তাই ত্বরণ।


15. বেগ কাকে বলে?

➤ একক সময়ে স্থান পরিবর্তনের হার। বেগ হলো সময়ের সাথে কোনো বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তনের হার, যা একটি নির্দিষ্ট দিকে ঘটে। এটি একটি ভেক্টর রাশি, যার অর্থ হলো বেগ প্রকাশ করার জন্য মান (কত দ্রুত) এবং দিক (কোন দিকে) উভয়ই প্রয়োজন। পদার্থবিদ্যার সংজ্ঞা অনুযায়ী বেগের মানকে দ্রুতি বলা হয়।


16. গতি কাকে বলে?

➤ কোনো বস্তুর অবস্থান পরিবর্তন। গতি (Motion) মানে হল সময়ের সাথে কোনো বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন। সহজ ভাষায়, কোনো বস্তু যদি তার চারপাশের সাপেক্ষে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায়, তবে সেই অবস্থাটিকে গতি বলা হয়। আরও বিস্তারিতভাবে, পদার্থবিজ্ঞানে, গতি বলতে বোঝায় সময়ের সাথে কোনো বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন বা সরণের হার। এটি একটি ভেক্টর রাশি, যার মান এবং দিক উভয়ই থাকে।


17. স্থানচ্যুতি ও দূরত্বের পার্থক্য কী?

➤ স্থানচ্যুতি দিকসহ দূরত্ব, আর দূরত্ব দিকবিহীন।


18. গতির সূত্র কয়টি?

➤ তিনটি।


19. সরণফল সূত্র কী?

➤ S = ut + ½ at²


20. চলন্ত ট্রেনের ভিতরে বল ফেললে সেটা কোথায় পড়ে?

➤ ট্রেনের যাত্রীর কাছে (কারণ বলের উপর ট্রেনের গতি প্রভাব ফেলে না)।


🔹 পর্ব ৩: কাজ, শক্তি ও ক্ষমতা

21. কাজ কাকে বলে?

➤ বল প্রয়োগ করে বস্তুকে সরালে করা কাজ। পদার্থবিজ্ঞানে, কাজ (Work) হলো বল (Force) এবং বলের দিকে বস্তুর সরণের (Displacement) গুণফল। সহজ ভাষায়, কোনো বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করে যদি তার সরণ ঘটানো যায়, তবে তাকে কাজ বলে।


22. কাজের একক কী?

➤ জুল (Joule)


23. ১ জুল কাজ বলতে কী বোঝায়?

➤ ১ নিউটন বল প্রয়োগে ১ মিটার সরালে।


24. শক্তি কাকে বলে?

➤ কাজ করার সামর্থ্য।


25. শক্তির একক কী?

➤ জুল (J)


26. ক্ষমতা কাকে বলে?

➤ একক সময়ে কাজের হার।


27. ক্ষমতার একক কী?

➤ ওয়াট (Watt)


28. বিদ্যুৎ শক্তির একক কী?

➤ কিলোওয়াট-আওয়ার (kWh)


29. ১ কিলোওয়াট-আওয়ার = কত জুল?

➤ ৩.৬ × ১০⁶ জুল


30. শক্তি রূপান্তর কাকে বলে?

➤ এক রূপ শক্তি অন্য রূপে পরিণত হওয়া।


🔹 পর্ব ৪: তাপ ও তাপগতিবিদ্যা

31. তাপ কাকে বলে?

➤ উত্তপ্ত বস্তু থেকে শীতল বস্তুতে প্রবাহমান শক্তি। তাপ হলো এক প্রকার শক্তি যা ঠান্ডা বা গরমের অনুভূতি সৃষ্টি করে। যখন দুটি ভিন্ন তাপমাত্রার বস্তুকে একসাথে আনা হয়, তখন উচ্চ তাপমাত্রা থেকে নিম্ন তাপমাত্রার বস্তুতে শক্তি স্থানান্তরিত হয়, একেই তাপ বলে।


32. তাপমাত্রা কাকে বলে?

➤ বস্তুর গরম বা ঠান্ডা ভাবের পরিমাপ। তাপমাত্রা হল কোনো বস্তু কতটা গরম বা ঠান্ডা, তার পরিমাপ। এটি কোনো বস্তুর কণার গড় গতিশক্তির একটি পরিমাপ যা গতির সাথে সম্পর্কিত এক ধরণের শক্তি। সহজ ভাষায়, তাপমাত্রা হল কোনো বস্তু কতটা গরম বা ঠান্ডা, তা নির্দেশ করে।


33. তাপমাত্রা মাপার একক কী কী?

➤ সেলসিয়াস, ফারেনহাইট, কেলভিন।


34. তাপের সঞ্চালন কতভাবে হয়?

➤ তাপ সঞ্চালনের তিনটি প্রধান উপায় রয়েছে: পরিবহন, পরিচলন এবং বিকিরণ।


35. তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে গ্যাসের চাপ বাড়ে কেন?

➤ অণুগুলোর গতি বৃদ্ধি পায়। গ্যাসের তাপমাত্রা বাড়ালে গ্যাসের অণুগুলোর গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, যার ফলে তারা পাত্রের দেয়ালে আরও জোরে এবং ঘন ঘন আঘাত করে, ফলে গ্যাসের চাপ বেড়ে যায়।


36. বিশেষ তাপ ধারকত্ব কাকে বলে?

➤ কোনো পদার্থের একক ভরের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১ কেলভিন বৃদ্ধি করতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয়, তাকে ঐ পদার্থের আপেক্ষিক তাপ বা আপেক্ষিক তাপগ্রাহিতা বা বিশেষ তাপ ধারকত্ব বলে। একে সাধারণত 'c' দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং এর একক হল জুল প্রতি কিলোগ্রাম কেলভিন (J kg⁻¹ K⁻¹)।


37. তাপ শক্তি সংরক্ষণ সূত্র কী বলে?

➤ তাপ হারানো = তাপ পাওয়া। তাপ শক্তি সংরক্ষণ সূত্র বলে যে, একটি বদ্ধ সিস্টেমে, মোট তাপ শক্তি সবসময় স্থির থাকে। একে “তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র” বা “শক্তির নিত্যতা সূত্র” ও বলা হয়। এর অর্থ হল, তাপ শক্তি তৈরি বা ধ্বংস করা যায় না, এটি কেবল এক রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তিত হতে পারে।


38. ১ ক্যালরি = কত জুল?

➤ ৪.১৮ জুল


39. তাপীয় সম্প্রসারণ কী?

➤ তাপের কারণে বস্তুর আয়তন বৃদ্ধি। তাপীয় সম্প্রসারণ হলো তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে কোনো বস্তু আকারে বড় হওয়া বা প্রসারিত হওয়া। যখন কোনো বস্তুকে উত্তপ্ত করা হয়, তখন তার অণুগুলি অধিক শক্তি লাভ করে এবং দ্রুত কম্পন করতে শুরু করে, যার ফলে তারা একে অপরের থেকে বেশি দূরে সরে যায় এবং বস্তুটির আকার বৃদ্ধি পায়। এই ঘটনাটিই তাপীয় সম্প্রসারণ নামে পরিচিত। এটি কঠিন, তরল এবং গ্যাসীয় সব পদার্থেই দেখা যায়।


40. বাইমেটালিক স্ট্রিপ কী কাজে লাগে?

➤ থার্মোস্ট্যাটে তাপ নিয়ন্ত্রণে। বাইমেটালিক স্ট্রিপ (Bimetallic strip) প্রধানত তাপমাত্রা পরিবর্তনের কারণে ঘটে যাওয়া যান্ত্রিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কাজে লাগানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি দুটি ভিন্ন ধাতুর পাতকে একসাথে জোড়া দিয়ে তৈরি করা হয়, যেখানে তাপমাত্রা বাড়লে একটি ধাতু অন্যটির চেয়ে বেশি প্রসারিত হয়। এই কারণে এটি বাঁকতে শুরু করে এবং এই বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন যন্ত্রে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, সুরক্ষা এবং সংকেত প্রদানে ব্যবহৃত হয়।


🔹 পর্ব ৫: তরল ও গ্যাস

41. চাপ কাকে বলে?

➤ একক এলাকায় বল প্রয়োগ। কোনো বস্তুর পৃষ্ঠতলের উপর একক ক্ষেত্রফলে প্রযুক্ত বলকে চাপ বলে। এটি একটি রাশি যা কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল এবং সেই বস্তুর ক্ষেত্রফলের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।


42. চাপের একক কী?

➤ পাসকেল (Pa)


43. পাস্কলের সূত্র কী?

➤ চাপ সর্বত্র সমানভাবে প্রবাহিত হয়। পাস্কলের সূত্রটি হলো, আবদ্ধ পাত্রে রাখা স্থির তরলের যেকোনো বিন্দুতে চাপ প্রয়োগ করলে সেই চাপ কিছুমাত্র না কমে তরলের সবদিকে সমানভাবে সঞ্চালিত হয় এবং পাত্রের দেয়ালে লম্বভাবে ক্রিয়া করে।


44. আর্কিমিডিসের সূত্র কী?

➤ আর্কিমিডিসের সূত্রটি হলো, যখন কোনো বস্তু আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে তরলে নিমজ্জিত হয়, তখন বস্তুটি একটি ঊর্ধ্বমুখী বল অনুভব করে, যা বস্তু দ্বারা অপসারিত তরলের ওজনের সমান। একে প্লবতাও বলা হয়। সহজ ভাষায়, কোনো বস্তু পানিতে ডোবালে, সেটি কিছু ওজনের হ্রাস অনুভব করে, যা আসলে বস্তুটির দ্বারা অপসারিত পানির ওজনের সমান।


45. পানিতে বস্তু হালকা হয় কেন?

➤ বায়ুচাপ বা বুইয়েন্সির কারণে। পানিতে বস্তু হালকা লাগে কারণ বস্তু যখন পানিতে ডোবে, তখন এটি কিছু পরিমাণ পানি সরিয়ে দেয়। এই সরানো পানির ওজন বস্তুর ওজনের সমান বা তার চেয়ে বেশি হলে বস্তুটি পানিতে ভাসে বা হালকা লাগে। এটি আর্কিমিডিসের সূত্র দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়। এই সূত্র অনুযায়ী, কোনো বস্তু তরলে নিমজ্জিত হলে এটি একটি ঊর্ধ্বমুখী বল অনুভব করে, যা অপসারিত তরলের ওজনের সমান।

পানিতে বস্তু হালকা লাগার কারণ ব্যাখ্যা করতে হলে, আর্কিমিডিসের সূত্রটি বোঝা দরকার। এই সূত্রটি বলে যে, কোনো বস্তু যখন তরলে (যেমন - পানি) আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত হয়, তখন এটি একটি ঊর্ধ্বমুখী বল অনুভব করে। এই ঊর্ধ্বমুখী বলটি বস্তুটি যে পরিমাণ তরল সরিয়ে দেয়, তার ওজনের সমান হয়। যদি এই ঊর্ধ্বমুখী বল বস্তুর ওজনের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে বস্তুটি পানিতে ভেসে উঠবে এবং হালকা অনুভব হবে। যদি ঊর্ধ্বমুখী বল বস্তুর ওজনের চেয়ে কম হয়, তবে বস্তুটি ডুবে যাবে।

সুতরাং, পানিতে বস্তু হালকা লাগার মূল কারণ হল প্লবতা (buoyancy)। প্লবতা হল সেই ঊর্ধ্বমুখী বল যা কোনো বস্তুকে তরলে নিমজ্জিত করলে অনুভব হয়। এই বলটি বস্তু দ্বারা অপসারিত তরলের ওজনের সমান হয়। যদি এই বল বস্তুর ওজনের চেয়ে বেশি হয়, তবে বস্তুটি হালকা অনুভব হবে এবং যদি কম হয়, তবে বস্তুটি ডুবে যাবে।

উদাহরণস্বরূপ, একটি পাথরের টুকরা পানিতে ফেললে এটি ডুবে যায়, কারণ পাথর দ্বারা অপসারিত পানির ওজন পাথরের ওজনের চেয়ে কম। কিন্তু একটি কাঠের টুকরা পানিতে ফেললে এটি ভাসে, কারণ কাঠ দ্বারা অপসারিত পানির ওজন কাঠের ওজনের চেয়ে বেশি বা সমান হয়। এই কারণে, যখন আপনি পানিতে নামেন, তখন আপনার শরীর হালকা অনুভব হয়, কারণ আপনার শরীরও কিছু পরিমাণ পানি সরিয়ে দেয় এবং আপনি একটি ঊর্ধ্বমুখী বল অনুভব করেন।


46. অল্পপ্লাব্য বস্তু কীভাবে ভাসে?

➤ ঘনত্ব কম হওয়ায়। অল্প ওজনের বা কম ঘনত্বের বস্তু পানিতে ভাসে, কারণ এদের উপর প্রযুক্ত প্লবতা (buoyancy) এদের ওজনের চেয়ে বেশি হয়। প্লবতা হল একটি ঊর্ধ্বমুখী বল যা কোনো বস্তুকে তরলে নিমজ্জিত করলে তার উপর ক্রিয়া করে।


47. হাইড্রোলিক প্রেসে পাস্কলের সূত্র ব্যবহার হয় কেন?

➤ চাপকে বহুগুণ বাড়াতে। হাইড্রোলিক প্রেসে প্যাসকেলের সূত্র ব্যবহার করা হয় কারণ এটি একটি আবদ্ধ তরলের উপর চাপ প্রয়োগ করলে সেই চাপ তরলের সব দিকে সমানভাবে সঞ্চালিত হয়। এই নীতির কারণে, একটি ছোট পিস্টনে সামান্য বল প্রয়োগ করে, একটি বৃহত্তর পিস্টনে অনেক বেশি বল তৈরি করা যায়, যা হাইড্রোলিক প্রেসকে ভারী বস্তু উত্তোলন বা চাপ দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা যায়।


48. অ্যাসেন্ডিং বেলুন উঠতে পারে কেন?

➤ বাতাসের চেয়ে গ্যাসের ঘনত্ব কম। গরম বাতাসের বেলুন বা গ্যাস বেলুন (যেমন হিলিয়াম বেলুন) বাতাসের চেয়ে হালকা হওয়ার কারণে উপরে উঠতে পারে। গরম বাতাস বা হিলিয়াম, বাতাসের চেয়ে কম ঘনত্বের হওয়ায় এটি উপরে উঠে যায়। অন্যভাবে বললে, গরম বাতাস বা হিলিয়াম বেলুন দ্বারা স্থানান্তরিত বাতাসের ওজন বেলুনের ওজনের চেয়ে বেশি হয়, ফলে এটি ভেসে থাকে।


49. তরলে চাপ নির্ভর করে কীসের উপর?

➤ গভীরতা, ঘনত্ব ও অভিকর্ষজ ত্বরণ।


50. বারোমিটার দিয়ে কী মাপা হয়?

➤ বায়ুর চাপ।


🔹 পর্ব ৬: আলো ও শব্দ

51. আলোকবর্ষ কাকে বলে?

➤ আলো এক বছরে যত দূরত্ব অতিক্রম করে। আলোকবর্ষ হলো জ্যোতির্বিজ্ঞানে ব্যবহৃত একটি দূরত্বের একক। এটি মূলত আলো এক বছরে যতদূর পথ অতিক্রম করে সেই দূরত্বকে বোঝায়। সহজ ভাষায়, এটি আলোর গতিতে এক বছরে অতিক্রান্ত দূরত্ব।


52. আলোর গতি কত?

➤ ৩ × ১০⁸ m/s


53. প্রতিফলন কাকে বলে?

➤ আলো প্রতিফলক পৃষ্ঠে ফিরে আসা। আলো যখন কোনো মাধ্যমে (যেমন- বাতাস, পানি) প্রবাহিত হওয়ার সময় অন্য কোনো মাধ্যমে বাধা পায়, তখন কিছু আলোকরশ্মি প্রথম মাধ্যমে আবার ফিরে আসে, এই ঘটনাকে আলোর প্রতিফলন বলে। সহজ ভাষায়, আলো কোনো পৃষ্ঠে পড়ে যদি ফিরে আসে, তবে সেই ঘটনাটিই আলোর প্রতিফলন।


54. প্রতিসরণ কী?

➤ ভিন্ন ঘনত্বের মাধ্যমে আলো বাঁকায়। প্রতিসরণ (Refraction) হল আলোর এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে যাওয়ার সময় আলোর দিক পরিবর্তন হওয়া। সহজ ভাষায়, যখন আলোকরশ্মি এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে প্রবেশ করে, তখন এটি বাঁকতে থাকে। একেই আলোর প্রতিসরণ বলা হয়।


55. আয়নার কোণ কীভাবে গঠিত হয়?

➤ আপতন কোণ = প্রতিফলন কোণ।

একটি আয়নার কোণ (angle of incidence and reflection) মূলত আলোকরশ্মি যখন আয়নার উপর পড়ে এবং প্রতিফলিত হয়, তখন তাদের আপতন কোণ (angle of incidence) ও প্রতিফলন কোণের (angle of reflection) মাধ্যমে গঠিত হয়। এই দুটি কোণ সবসময় সমান হয়, যা আলোর প্রতিফলন আইনের মূল ভিত্তি।


56. উত্তল লেন্স কী?

➤ মধ্যভাগ মোটা, কিনারা পাতলা। উত্তল লেন্স হল এমন একটি লেন্স যার মধ্যভাগ প্রান্তের চেয়ে মোটা হয়। একে অভিসারী লেন্সও বলা হয়, কারণ এটি আলোকরশ্মিকে একবিন্দুতে মিলিত করে।


57. দূরবীক্ষণ যন্ত্রে কোন লেন্স ব্যবহৃত হয়?

➤ উত্তল লেন্স।


58. ধ্বনি তরঙ্গ কী ধরনের?

➤ অনুপাতিক (Longitudinal)। শব্দ তরঙ্গ এক ধরনের অনুদৈর্ঘ্য (longitudinal) তরঙ্গ। এটি এমন এক ধরনের তরঙ্গ যা মাধ্যমের কণাগুলোকে তরঙ্গ প্রবাহের সমান্তরালে কম্পিত করে শক্তি সঞ্চালিত করে।


59. শব্দের গতি সবচেয়ে বেশি কোথায়?

➤ কঠিন পদার্থে।


60. শব্দ তরঙ্গ কিসে চলে না?

➤ নিরাশক্ত শূন্যস্থানে।


🔹 পর্ব ৭: চৌম্বক ও বিদ্যুৎ

61. চুম্বক কাকে বলে?

➤ লোহার টুকরাকে আকর্ষণকারী পদার্থ। চুম্বক (Magnet) হলো সেই বস্তু যা লোহা, নিকেল, কোবাল্ট এবং কিছু সংকর ধাতু সহ চৌম্বক পদার্থকে আকর্ষণ করে এবং একটি নির্দিষ্ট দিকে দিক নির্দেশ করে। সহজ ভাষায়, চুম্বক হল এমন একটি বস্তু যা অন্য চুম্বক বা চৌম্বক পদার্থকে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করতে পারে।


62. পৃথিবী একটি বড় কী?

➤ চুম্বক।


63. চৌম্বক রেখা কোথা থেকে কোথায়?

➤ উত্তর মেরু → দক্ষিণ মেরু


64. তড়িৎ প্রবাহ কাকে বলে?

➤ ইলেকট্রনের প্রবাহ। তড়িৎ প্রবাহ হলো পরিবাহীর মধ্যে দিয়ে ইলেকট্রন বা আধানের প্রবাহ। সহজ ভাষায়, কোন পরিবাহীর মধ্যে দিয়ে একক সময়ে যে পরিমাণ আধান প্রবাহিত হয়, তাকে তড়িৎ প্রবাহ বলে। একে Ampere (অ্যাম্পিয়ার) এককে মাপা হয়।


65. তড়িৎ প্রবাহের একক কী?

➤ অ্যাম্পিয়ার (A)


66. বৈদ্যুতিক বিভবের একক কী?

➤ ভোল্ট (V)


67. ওহমের সূত্র কী?

➤ V = IR


68. বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনে কয়লা কী রূপে ব্যবহৃত হয়?

➤ জ্বালানি রূপে।


69. ট্রান্সফরমার কী করে?

➤ ভোল্টেজ কমায় বা বাড়ায়।


70. আলটারনেটিং কারেন্ট (AC) কী?

➤ প্রবাহের দিক বারবার পাল্টায়। অল্টারনেটিং কারেন্ট ( AC ) হল একটি বৈদ্যুতিক প্রবাহ যা পর্যায়ক্রমে দিক বিপরীত করে এবং সময়ের সাথে সাথে ক্রমাগত এর মাত্রা পরিবর্তন করে, সরাসরি প্রবাহের (DC) বিপরীতে, যা শুধুমাত্র একটি দিকে প্রবাহিত হয়।


🔹 পর্ব ৮: পরমাণু ও নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞান

71. পরমাণু কাকে বলে?

➤ মৌলিক কণার ক্ষুদ্রতম একক। পরমাণু হল একটি মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা যা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেয় এবং পদার্থের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। এটি প্রোটন, নিউট্রন ও ইলেকট্রন দ্বারা গঠিত। সাধারণভাবে, পরমাণু নিস্তড়িত (neutral) হলেও, রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় ইলেকট্রন আদান-প্রদানের মাধ্যমে এটি আধানগ্রস্ত (charged) হতে পারে।


72. ইলেকট্রনের আবিষ্কার করেন কে?

➤ জে. জে. থমসন।


73. নিউট্রনের আবিষ্কারক কে?

➤ চ্যাডউইক।


74. আইসোটোপ কী?

➤ সমান প্রোটন, ভিন্ন নিউট্রন বিশিষ্ট পরমাণু। আইসোটোপ হলো একই মৌলের বিভিন্ন রূপ, যাদের নিউক্লিয়াসে প্রোটন সংখ্যা (পারমাণবিক সংখ্যা) একই থাকে, কিন্তু নিউট্রন সংখ্যা ভিন্ন হওয়ার কারণে ভর সংখ্যা ভিন্ন হয়। সহজভাবে, আইসোটোপ হলো একই "উপাদান" এর পরমাণু, যাদের "ওজন" ভিন্ন।


75. রেডিওঅ্যাক্টিভ বিকিরণ কয় রকম?

➤ α, β, γ


76. নিউক্লিয়ার ফিশন ও ফিউশন পার্থক্য কী?

➤ ফিশন = বিভাজন, ফিউশন = সংযোজন।


77. পারমাণবিক বোমায় কোন বিক্রিয়া?

➤ ফিশন।


78. সূর্যে কোন বিক্রিয়া?

➤ নিউক্লিয়ার ফিউশন। সূর্যে নিউক্লিয়ার ফিউশন (nuclear fusion) নামক এক ধরনের পারমাণবিক বিক্রিয়া ঘটে। এই প্রক্রিয়ায়, সূর্যের অভ্যন্তরে উচ্চ চাপ এবং তাপমাত্রায় দুটি হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস একত্রিত হয়ে একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং প্রচুর পরিমাণে শক্তি উৎপন্ন করে।


79. জিওন কাকে বলে?

➤ হিগস বোসন কণাকে জিওন বলে।


80. লেজার কী?

➤ সুনির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো।


🔹 পর্ব ৯: দৈনন্দিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

81. মাইক্রোওয়েভ ওভেন কীভাবে কাজ করে?

➤ জলীয় অণুকে উত্তপ্ত করে। মাইক্রোওয়েভ ওভেন একটি বিশেষ ধরণের বৈদ্যুতিক যন্ত্র যা খাবার গরম করতে বা রান্না করতে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার করে যা খাবারের মধ্যে থাকা জলের অণুগুলোকে কাঁপিয়ে দেয়, এবং এর ফলে ঘর্ষণজনিত কারণে তাপ উৎপন্ন হয় যা খাবারকে গরম করে।


82. এক্সরে ব্যবহার কোথায়?

➤ চিকিৎসা চিত্রায়নে।


83. ফাইবার অপটিকস কী কাজে লাগে?

➤ দ্রুত তথ্য প্রেরণ।


84. সোলার সেল কী কাজ করে?

➤ আলোক শক্তিকে বিদ্যুতে রূপান্তর।


85. ইলেকট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গের উদাহরণ কী?

➤ রেডিও, মাইক্রোওয়েভ, আলো, এক্সরে


86. রাডার কী?

➤ বস্তু শনাক্তে ব্যবহৃত তরঙ্গ প্রযুক্তি।


87. মোবাইল ফোন কোন তরঙ্গ ব্যবহার করে?

➤ রেডিও তরঙ্গ।


88. GPS কীভাবে কাজ করে?

➤ স্যাটেলাইট সিগন্যাল ভিত্তিক অবস্থান নির্ণয়।


89. ন্যানো টেকনোলজি কী?

➤ পরমাণু স্তরে প্রযুক্তি ব্যবহার। ন্যানোটেকনোলজি হলো আণবিক এবং পারমাণবিক পর্যায়ে বস্তু নিয়ে কাজ করার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল। এটি এমন একটি প্রযুক্তি যা ১ থেকে ১০০ ন্যানোমিটার আকারের বস্তু নিয়ে কাজ করে। ন্যানোটেকনোলজি নতুন বৈশিষ্ট্য এবং কার্যকারিতা তৈরি করার জন্য উপকরণ এবং ডিভাইসগুলির হেরফের এবং উত্পাদন জড়িত।


90. সুপারকন্ডাক্টর কী?

➤ যেসব পদার্থে প্রতিরোধ শূন্য। সুপারকন্ডাক্টর হলো এক ধরনের পদার্থ যা একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার নিচে ঠান্ডা করলে বিদ্যুতের (তড়িৎ প্রবাহের) কোনো রোধ ছাড়াই বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। অর্থাৎ, এই অবস্থায় এর মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে কোনো শক্তি অপচয় হয় না।


🔹 পর্ব ১০: অন্যান্য (বিভিন্ন পরীক্ষা উপযোগী)

91. ডায়নামো কী?

➤ যন্ত্র যা যান্ত্রিক শক্তি থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করে। ডায়নামো হলো এক ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্র যা যান্ত্রিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে। এটি একটি জেনারেটরের মতো কাজ করে, যেখানে আর্মেচার নামক একটি অংশ ঘোরে এবং এর ফলে চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে পরিবাহী তারের কুণ্ডলীতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।


92. বৈদ্যুতিক মোটর কী?

➤ বিদ্যুৎ শক্তিকে যান্ত্রিকে রূপ দেয়। বৈদ্যুতিক মোটর, এমন কোনও ডিভাইস যা বৈদ্যুতিক শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করে, সাধারণত তড়িৎ চৌম্বকীয় ঘটনা ব্যবহার করে । বেশিরভাগ বৈদ্যুতিক মোটর তাদের যান্ত্রিক টর্ক তৈরি করে চৌম্বক ক্ষেত্রের সমকোণে একটি দিকে কারেন্ট বহনকারী পরিবাহীর মিথস্ক্রিয়া দ্বারা।


94. রিয়োস্ট্যাট কী কাজে লাগে?

➤ তড়িৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে।


95. গ্যালভানোমিটার কী?

➤ তড়িৎ প্রবাহ শনাক্তকরণ যন্ত্র।


96. সোলার কুকার কীভাবে কাজ করে?

➤ সূর্যের তাপ কেন্দ্রীভূত করে রান্না।


97. বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রধান উৎস কী?

➤ কয়লা, গ্যাস, জলবিদ্যুৎ।


98. ক্যাপাসিটর কী?

➤ চার্জ সঞ্চয়কারী যন্ত্র।


99. স্কেলার রাশি কী?

➤ কেবল মান আছে, দিক নেই। স্কেলার রাশি হলো সেইসব ভৌত রাশি, যেগুলির শুধুমাত্র মান (magnitude) আছে, কিন্তু কোনো দিক (direction) নেই। অন্যভাবে বললে, যে রাশিগুলিকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করার জন্য কেবল মানের প্রয়োজন হয়, দিকের প্রয়োজন হয় না, তাদের স্কেলার রাশি বলা হয়।


100. ভেক্টর রাশি কী?

➤ মান ও দিক দুটোই থাকে। ভেক্টর রাশি হল সেইসব ভৌত রাশি যা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করার জন্য মান (magnitude) এবং দিক (direction) উভয়ই প্রয়োজন হয়।


আইনস্টাইনের বিখ্যাত সমীকরণ কী?

➤ E = mc²

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url