সংখ্যা (Numbers) সম্পর্কিত সম্পূর্ণ বাংলা নোট
সংখ্যা (Numbers) — বিস্তারিত বাংলা নোট
সংখ্যা এমন একটি চিহ্ন বা প্রতীক যা দিয়ে আমরা গণনা, পরিমাপ, স্থান নির্ধারণ ও তুলনা করতে পারি। দৈনন্দিন জীবন থেকে বিজ্ঞানের জগৎ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে সংখ্যা অপরিহার্য।
সংখ্যা হল গণিতের মৌলিক ভিত্তি, যা দিয়ে আমরা বস্তু গণনা, পরিমাপ এবং তুলনা করি। প্রাকৃতিক সংখ্যা থেকে শুরু করে পূর্ণসংখ্যা, মৌলিক সংখ্যা, যৌগিক সংখ্যা, রাশিগত ও অরাশিগত সংখ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের সংখ্যা রয়েছে, যাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার রয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে থেকে শুরু করে বিজ্ঞানের সকল শাখায় সংখ্যার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সংখ্যার প্রকারভেদ এবং তাদের গুণাবলী ভালোভাবে বোঝা শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে যারা চাকরি পরীক্ষা বা একাডেমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সংখ্যার ইতিহাস
সংখ্যার ধারণা মানব সভ্যতার শুরু থেকেই। প্রথমে মানুষ আঙ্গুল গুণে সংখ্যা নির্ধারণ করত। পরে বিভিন্ন প্রতীক আবিষ্কার হয়। বর্তমান ব্যবহৃত দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির উৎস প্রাচীন ভারতের হিন্দু-আরবিক গণিত।
সংখ্যার শ্রেণিবিন্যাস
১. প্রাকৃতিক সংখ্যা (Natural Numbers): ১ থেকে শুরু করে গননাযোগ্য সব সংখ্যা। (যেমন: ১, ২, ৩, ৪...)
এগুলি শূন্যকে অন্তর্ভুক্ত করে না।
২. পূর্ণসংখ্যা (Whole Numbers): প্রাকৃতিক সংখ্যার সঙ্গে ০ যুক্ত করলে পূর্ণসংখ্যা হয়। (০, ১, ২, ৩, ৪...)
৩. পূর্ণাঙ্গ সংখ্যা (Integers): ধনাত্মক, ঋণাত্মক এবং শূন্য সহ সংখ্যাগুলো। (..., -৩, -২, -১, ০, ১, ২, ৩, ...)
৪. মৌলিক সংখ্যা (Prime Numbers): যেসব সংখ্যার কেবল দুইটি গুণনীয়ক থাকে – ১ ও সংখ্যা নিজেই। (২, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩...)
১ মৌলিক নয়, এবং ২ হল একমাত্র জোড় মৌলিক সংখ্যা।
৫. যৌগিক সংখ্যা (Composite Numbers): যেসব সংখ্যার ১ ও নিজেকে ছাড়াও অন্য গুণনীয়ক থাকে। (৪, ৬, ৮, ৯, ১০...)
৬. জোড় সংখ্যা (Even Numbers): ২ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য। (০, ২, ৪, ৬, ৮...)
৭. বিজোড় সংখ্যা (Odd Numbers): ২ দ্বারা বিভাজ্য নয়। (১, ৩, ৫, ৭, ৯...)
রাশিগত ও অরাশিগত সংখ্যা
রাশিগত সংখ্যা (Rational Numbers): যেসব সংখ্যা p/q আকারে প্রকাশযোগ্য যেখানে p ও q পূর্ণসংখ্যা এবং q ≠ ০।
উদাহরণ: ½, ⅔, -৩/৪, ০.৭৫
দশমিক অংশ সীমিত বা পুনরাবৃত্তিমূলক হতে পারে।
অরাশিগত সংখ্যা (Irrational Numbers): যেগুলো ভগ্নাংশ আকারে প্রকাশযোগ্য নয়, এবং দশমিক অংশ অসীম ও অপুনরাবৃত্ত।
উদাহরণ: √২, π, e
বাস্তব ও কাল্পনিক সংখ্যা
বাস্তব সংখ্যা (Real Numbers): রাশিগত ও অরাশিগত সংখ্যার সমষ্টি। যা আমরা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করি।
কাল্পনিক সংখ্যা (Imaginary Numbers): √-১ বা i দ্বারা প্রকাশিত সংখ্যাগুলো। জটিল সংখ্যা বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়।
সংখ্যা পদ্ধতি (Number Systems)
দশমিক (Decimal): বেস ১০, অঙ্ক ০-৯। সর্বাধিক প্রচলিত।
বাইনারি (Binary): বেস ২, অঙ্ক ০ ও ১। কম্পিউটারের মুল সংখ্যা পদ্ধতি।
অক্টাল (Octal): বেস ৮, অঙ্ক ০-৭।
হেক্সাডেসিমেল (Hexadecimal): বেস ১৬, অঙ্ক ০-৯ ও A-F।
গুণিতক, গ.সা.গু. ও ল.সা.গু.
গুণিতক (Multiple): কোন সংখ্যা দ্বারা গুণ করলে যে সংখ্যাগুলো পাওয়া যায়।
গ.সা.গু. (GCD): Greatest Common Divisor — দুই বা ততোধিক সংখ্যার সর্বোচ্চ সাধারণ গুণনীয়ক।
ল.সা.গু. (LCM): Lowest Common Multiple — দুই বা ততোধিক সংখ্যার সর্বনিম্ন সাধারণ গুণিতক।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ
- ১ মৌলিক সংখ্যা নয়, ২ হল একমাত্র জোড় মৌলিক সংখ্যা।
- ০ একটি জোড় সংখ্যা।
- π একটি অরাশাগত সংখ্যা।
- √৪=২ বাস্তব সংখ্যা, √-১ একটি কাল্পনিক সংখ্যা।
সংক্ষিপ্ত সারাংশ
সংখ্যা গণিতের প্রাণ। গণনা, পরিমাপ, পরিসংখ্যান, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তির প্রতিটি ক্ষেত্রে সংখ্যার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সংখ্যার ধরন, ব্যবহার ও গুণগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি।
শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রস্তুতির জন্য উপযোগী।